দেশে প্রতিবছর দুর্ঘটনা ও যানবাহন বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। বছরে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহতদের একটা বড় অংশ মোটরসাইকেল আরোহী। আর যেসব যানবাহন দুর্ঘটনার জন্য দায়ী এর মধ্যে মোটরসাইকেল অন্যতম।

প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের বিপরীতে ২৮ জন সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন। মৃত্যুর এই হার বিশ্বে সর্বোচ্চ।

গত তিন বছরে ৪ হাজার ৬৪৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪ হাজার ৬২২ জন। এর মধ্যে বিদায়ী বছর ২০২১ সালে ২ হাজার ৭৮টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২ হাজার ২১৪ জন। আগের বছর ২০২০ সালে ১ হাজার ৩৮১টি দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৪৬৩ জন। এছাড়া ২০১৯ সালে দেশে ১ হাজার ১৮৯টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছিল ৯৪৫ জন। পরের বছর ২০২০ সালে এ মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৪৬৩ জনে; যেখানে দুর্ঘটনা ঘটে ১৩৮১টি। সবশেষ ২০২১ সালে ২০৭৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে ২ হাজার ২?১৪ জন। সব মিলিয়ে গত তিন বছরে ৪৬৪৮টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় প্রাণ গেছে ৪৬২২ জনের। ২০১৯ সালের তুলনায় গত বছর এ মৃত্যুর হার ১৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এসব তথ্য জানায় রোড সেফটি ফাউন্ডেশন নামে একটি বেসরকারি সংগঠন।

রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে (পঙ্গু হাসপাতাল) ভর্তির প্রায় ৩০-৪০ শতাংশই মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় আহত রোগী।

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদালয়ের (বুয়েট) এক গবেষণা বলছে, প্রতিবছর দেশে প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের বিপরীতে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন ২৮ দশমিক ৪ জন। তাঁদের প্রায় ৪০ শতাংশেরই বয়স ২৪ থেকে ৩০ বছর। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় মৃত্যুর এই হার সারা বিশ্বে সর্বোচ্চ। যদিও মাথাপিছু মোটরসাইকেল ব্যবহারকারীর হিসাবে বাংলাদেশের অবস্থান সবার পেছনে।

বিশ্বব্যাংকের সহায়তায় সড়ক নিরাপত্তাসংক্রান্ত গবেষণাটি করেছে বুয়েটের অ্যাক্সিডেন্ট রিসার্চ ইনস্টিটিউট (এআরআই)। গত বছর শেষ হওয়া এই গবেষণায় মোটরসাইকেলের ব্যবহার সবচেয়ে বেশি, এমন ১৬টি দেশের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এসব দেশের মধ্যে সবচেয়ে বেশি মোটরসাইকেল ব্যবহার করেন ভিয়েতনামের মানুষ। সেখানে প্রতি ১ হাজার মানুষের বিপরীতে মোটরসাইকেল আছে ৩৫৮টি। বাংলাদেশে প্রতি ১ হাজার মানুষের জন্য মোটরসাইকেল আছে মাত্র ৭টি।

প্রতি ১০ হাজার মোটরসাইকেলের বিপরীতে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারাচ্ছেন

বাংলাদেশ -২৮.৪

কোম্বোডিয়া -১১.৯

লাওস -১১.৫

থাইলাণ্ড -১১.২

ভারত -৯

মিয়ান্মার -৮.৬

মালয়েশিয়া -৪.৪

ভিয়েত্নাম -৪.৪

ইণ্ডোনেশিয়া -২.৫

ভূটান -২.১

বিশ্বে গাড়ি উৎপাদনকারী দেশের মধ্যে জাপান অন্যতম। সে দেশে মোটরসাইকেল চলাচল নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এরপর দেখা গেছে সড়ক দুর্ঘটনা কমেছে অন্তত ৫০ শতাংশ। আমেরিকাসহ উন্নত অনেক দেশেই মোটরসাইকেল নিষিদ্ধ করার পর সড়ক দুর্ঘটনা কমার প্রমাণ মিলেছে।

যদি মালয়েশিয়ার কথা বলি, দেশটিতে মোটরসাইকেলে চলার প্রবণতা অনেক বেশি। সে অনুযায়ী সড়ক দুর্ঘটনা কিন্তু একেবারেই কম। কারণ সেখানে শৃঙ্খলার মধ্যে মোটরসাইকেল চলে। বাইক চলাচলের জন্য ডেডিকেটেড লাইনও রয়েছে। আইনও কঠোর। রাস্তায় কোনো বিশৃঙ্খলা নেই। তাই দুর্ঘটনাও নিয়ন্ত্রণে। শুধু মালয়েশিয়া বলে কথা নয়, বিশ্বের উন্নয়নশীল অনেক দেশে মোটরসাইকেলের ব্যবহার বেশি। তবে দুর্ঘটনা কম। নিয়মের মধ্যে চলায় মোটরসাইকেল সেসব দেশে আতঙ্ক তৈরি করতে পারেনি।