৩৮, ৪১৬, ৩১৫, ৪২৮, ৩১১, ২০৭ ও ৩৯৯। দক্ষিণ আফ্রিকার সবশেষ সাত ওয়ানডে ম্যাচের রানের পরিসংখ্যান এটি। ১৩তম ওয়ানডে বিশ্বকাপ শুরুর আগে এই দলকে কেউ হয়তো ফেবারিটের তালিকায় রাখেননি। কিন্তু বিশ্বকাপে প্রোটিয়ারা যেভাবে পারফরম্যান্স করছে, তাতে চালকের আসন এখন দক্ষিণ আফ্রিকার দখলে। এটি বললে হয়তো অত্যুক্তি করা হবে না। আর তার প্রমাণ আরও একবার পাওয়া গেল ইংল্যান্ডের বিপক্ষে।

শনিবার (২১ অক্টোবর) ভারত বিশ্বকাপের ২০তম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৭ উইকেট হারিয়ে ৩৯৯ রান সংগ্রহ করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ২২ ওভারে ১৭০ রান তুলতেই শেষ হয় ইংলিশদের ইনিংস। তাতে দক্ষিণ আফ্রিকা ২২৯ রানের বড় জয় পায়।নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪২৮ রানের রেকর্ড সংগ্রহ গড়ে জিতেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। পরের ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩১১ রান তুলে জয়। এবার ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৯৯ রানের সংগ্রহ। জয় এলো ইংলিশদের বিপক্ষেও, সেটিও আবার দাপটের সঙ্গে জয়।

এই ম্যাচটির আগে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে ২০৭ রানে অলআউট হয়েছিল প্রোটিয়ারা। ওই ম্যাচটি বাদে ছয় ম্যাচে যে দাপট দেখিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা, তাতে চলতি বিশ্বকাপে দলটিকে চালকের আসনে মনে করাই যায়। এ দিকে প্রতিপক্ষের এমন পারফরম্যান্স দেখে শক্ত পরিকল্পনা করে মাঠে নামতে হবে বাংলাদেশ, পাকিস্তান, নিউজিল্যান্ড, ভারত ও আফগানিস্তানকে। সেটি না হলে শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া এবং ইংল্যান্ডের মতোই পরণতি হতে পারে।

 আরও পড়ুন: 

‘চোকার্স’ তকমাটা এ বারের বিশ্বকাপেও ঘোচাতে পারল না দক্ষিণ আফ্রিকা।

ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচটিতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নেমে টপলির প্রথম বলে বাউন্ডারি হাঁকানোর পরে দ্বিতীয় বলে কট বিহাইন্ড হন কুইন্টন ডি কক। তবে দ্বিতীয় উইকেটে আধিপত্য করেন রেজা হেনড্রিকস ও রসি ফন ডার ডুসেন। দুজনের জুটিতে আসে ১২১ রান। ৬১ বলে ৬০ রান করে রশিদের বলে জনি বেয়ারস্টোর হাতে ধরা পড়েন ডুসেন। রেজা আউট হন ৭৫ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৫ রানের ইনিংস খেলে।

এরপর ক্রিজে নেমে ছন্দ ধরে রাখেন অধিনায়ক মারক্রাম ও হেনরিখ ক্লাসেন। দলীয় ২৩৩ রানে ৪২ রানে ইনিংস খেলে সাজঘরে ফেরেন মারক্রাম। এরপর ক্রিজে নেমে ক্লাসেনকে সঙ্গ দিতে ব্যর্থ হন ডেভিড মিলার। ৬ বলে মাত্র ৫ রান করেই টপলির শিকার হন তিনি।

 তবে বিধ্বংসী ব্যাটার মিলারের অভাবটা পূরণ করেছেন বোলিং অলরাউন্ডার মার্কো ইয়ানসেন। ক্রিজে নেমে ক্লাসেনের সঙ্গে চার-ছক্কা হাঁকানোর উৎসবে যোগ দেন ইয়ানসেন। বিধ্বংসী ইনিংসে ৬১ বলে বিশ্বকাপ ইতিহাসের ষষ্ঠ দ্রুততম শতক তুলে নেন ক্লাসেন। অন্যদিকে ৩৫ বল মোকাবিলায় ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি তুলে নেন ইয়ানসেন। দুজন মিলে ১২.৪ ওভার মোকাবিলায় দলকে এনে দেন ১৫১ রান। ক্লাসেন ১০৯ রানে থামলেও ৭৫ রানে অপরাজিত থাকেন ইয়ানসেন। 

এ দিন প্রোটিয়াদের রানের পাহাড় গড়ে দেয়ার নায়ক ক্লাসেন বিশ্বকাপ ইতিহাসে ষষ্ঠ দ্রুততম শতক তুলে ৬৭ বলে ১০৯ রান করে আউট হন। তার ইনিংসটি ১২ চার ও ৪ ছক্কায় সাজানো ছিল। অন্যদিকে ক্লাসেনের সঙ্গী ইয়ানসেন ৬ ছক্কা ও ৩ চারে ৪২ বলে ক্যারিয়ার সেরা ৭৫ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন। এছাড়া ফিফটির ইনিংস খেলেছেন রেজা হেনড্রিকস ও রসি ফন ডার ডুসেন।

 ইংলিশদের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নিলেও বেশ খরুচে ছিলেন রিচ টপলি। ৮.৫ ওভারে তিনি দিয়েছেন ৮৮ রান। ২টি করে উইকেট নিয়েছেন গাস অ্যাটকিনসন ও আদিল রশিদ।

 আরও পড়ুন: 

 বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের হারিয়ে আফগানিস্তানের অঘটন

৪০০ রানের জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে দলীয় ১৮ রানে প্রথম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এরপরেই আসা-যাওয়ার মিছিল শুরু হয়। ৩৮ রান তুলতেই দলটির টপঅর্ডার ও মিডলঅর্ডারে ধ্বস নেমে আসে। দলীয় শতক পূরণ করতে গিয়ে ৮ উইকেট হারায় বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। শেষদিকে মার্ক উড ও গাস অ্যাটকিনসন মিলে ৩২ বলে ৭০ রানের ঝোড়ো জুটি গড়লেও শেষ রক্ষা হয়নি। থামতে হয়েছে ১৭০ রানে। তাতে ২২৯ রানের বড় জয় পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। রানের দিক থেকে ওয়ানডেতে ইংল্যান্ডের সবচেয়ে বড় হার এটি।

 এ নিয়ে এবারের বিশ্বকাপে প্রথম চার ম্যাচের তিনটিতেই হেরেছে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। সমান ম্যাচে দক্ষিণ আফ্রিকার জয় তিনটি।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

দক্ষিণ আফ্রিকা: ৫০ ওভারে ৩৯৯/৭ (ক্লাসেন ১০৯, হেনড্রিকস ৮৫, ইয়ানসেন ৭৫*, ডুসেন ৬০, মার্করাম ৪২; টপলি ৩/৮৮, অ্যাটকিসন ২/৬০)।

ইংল্যান্ড: ২২ ওভারে ১৭০ (উড ৪৩*, অ্যাটকিনসন ৩৫, ব্রুক ১৭; কোয়েৎজে ৩/৩৫, এনগিডি ২/২৬, ইয়ানসেন ২/৩৫)।

ফল: দক্ষিণ আফ্রিকা ২২৯ রানে জয়ী।

ম্যাচসেরা: আইনরিখ ক্লাসেন।