আল আমিন হোসেনের জন্ম ও বেড়ে ওঠা চাঁদপুর জেলার কচুয়া উপজেলায়। তিনি চাঁদপুর সদরের আল আমিন একাডেমি থেকে এইচএসসি পাস করেন। ছোটবেলা থেকেই ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ার তীব্র ইচ্ছে ছিল। কিন্তু গোল্ডেন এ প্লাস না থাকায় বুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারেননি। কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েও চান্স পাননি। শেষে কপাল খোলে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেকট্রনিক ও কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং ডিসিপ্লিন (ইসিই) বিভাগে। সেখান থেকে ২০১৯ সালে বিএসসি পাস করেন। ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের প্রতি তীব্র আকাঙ্ক্ষা থেকে ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আমাজনে চাকরির আবেদন করেন। সম্পূর্ণ আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার পর আমাজনে ‘সফটওয়্যার ডেভেলপমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার’ পদে চাকরির অফার পান।

তার আমাজনে চাকরি পাওয়া, নতুনদের জন্য পরামর্শ ও ভবিষ্যৎ ভাবনা সম্পর্কে কথা বলেছেন জাগো নিউজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনিসুল ইসলাম নাঈম—

জাগো নিউজ: আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান আমাজনে চাকরি পেয়েছেন, আপনার অনুভূতিকেমন?
আল আমিন হোসেন: বর্তমান ইন্টারনেট ভিত্তিক কোম্পানিগুলোর একটি বিরাট অংশ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে আমাজন ওয়েব সার্ভিসের ওপর নির্ভর করে। এ প্রতিষ্ঠানের অংশ হতে পারা অবশ্যই অনেক আনন্দের। তবে একইসঙ্গে এটি আমার এ যাবৎ কাজ করা সবচেয়ে বড় কোম্পানি হতে যাচ্ছে। সেখানে কেমন পারফর্ম করতে পারব, সেটা নিয়ে কিছুটা সংকোচও কাজ করছে। সব মিলিয়ে ভালো লাগাই বেশি।

জাগো নিউজ: কখন থেকে সফটওয়্যার ও প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি মনোযোগ দেওয়া হয়?
আল আমিন হোসেন: বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি বেশ কিছু মাইক্রোপ্রসেসর ভিত্তিক প্রজেক্ট করি। যেখানে ছোট ছোট কম্পিউটিং ডিভাইসকে সেন্সর এবং ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযোগ করে বেশ মজার মজার কাজ করা যায়। তখনই প্রোগ্রামিংয়ের প্রতি এক ধরনের ভালোবাসা তৈরি হয়। পরে থিসিস এবং ইন্টার্নশিপে প্রোগ্রামিং নিয়ে বেশ কিছু কাজ করা হয়েছে। ওয়ালটনে কাজ করার সময় বুঝতে পারি, আমার ঝোঁকটা প্রোগ্রামিংয়ের দিকে বেশি। ওয়ালটন ছাড়ার পর প্রথম একটি স্টার্টআপ কোম্পানিতে প্রথম সফটওয়ার ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কাজ শুরু করি।

জাগো নিউজ: আমাজনে চাকরি পাওয়ার জন্য নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করেছেন?
আল আমিন হোসেন: আমাজনে ইন্টারভিউয়ের দুটি দিক আছে। একটি লিডারশিপ প্রিন্সিপাল; যেখানে কিছু ক্যাটাগরিতে নিজের অভিজ্ঞতাকে উপস্থাপন করতে হয়। অন্যটি টেকনিক্যাল; যেখানে প্রোগ্রামিং প্রবলেম সমাধান করা এবং সিস্টেম ডিজাইন বিষয়ক আলোচনা করা হয়। আমি প্রস্তুতির জন্য ডাটা স্ট্রাকচার অ্যালগারিদমকে বেশ প্রাধান্য দিয়েছি। তাছাড়া কম্পিউটার সায়েন্সের বেসিক, স্কেলেবিলিটি, অবজেক্ট ওরিয়েন্টেড ডিজাইন ইত্যাদি নিয়ে পড়াশোনা করেছি। ইন্টারভিউয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে কমিউনিকেশন। প্রথমে একটি সমস্যা কীভাবে সমাধান করতে চাই, সেটি ইন্টারভিউয়ারের সাথে কথা বলে তার ফিডব্যাক নিতে হয়। এটিও প্রস্তুতির একটি অংশ।

জাগো নিউজ: আমাজনে কী ধরনের চাকরির সুযোগ আছে?
আল আমিন হোসেন: আমাজন অনেক বড় একটি টেকজায়ান্ট কোম্পানি। এখানে অনেক অনেক ধরনের চাকরির সুযোগ আছে। ইঞ্জিনিয়ারিং দিক থেকে বিবেচনা করলে সফটওয়্যার, সলিউশন আর্কিটেক্ট, অপারেশন, আইটি, সাপোর্ট ইত্যাদি বিষয়ে আমাজনে চাকরি করা যায়। তাছাড়া আমাজনের ওয়েবসাইটে সবগুলো চাকরির বিজ্ঞাপন পাওয়া যাবে।

জাগো নিউজ: কীভাবে একজন নতুন গ্র্যাজুয়েট আমাজনে চাকরির জন্য আবেদন করবেন?
আল আমিন হোসেন: এটি তিনভাবে হতে পারে। প্রথমত, সরাসরি আমাজনের জবসাইটে অ্যাপ্লাই করা। দ্বিতীয়ত, লিঙ্কডইনে বিভিন্ন রিক্রুটারদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মাধ্যমে আবেদন করা যায়। সবচেয়ে ভালো হচ্ছে আমাজনে চাকরিরত কারো সুপারিশের মাধ্যমে আবেদন করা। নতুন গ্র্যাজুয়েট হলে প্রতিযোগিতামূলক প্রোগ্রামিংয়ের ভালো অর্জন থাকলে সেটি খুবই সহায়ক হয়।

জাগো নিউজ: আমাজনে চাকরির জন্য ইন্টারভিউ দেওয়ার প্রক্রিয়া সম্পর্কে বলুন—
আল আমিন হোসেন: ইন্টারভিউয়ে তিনটি স্টেজ ছিল। প্রথম স্টেজে একটি অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নির্দিষ্ট সময়ে কিছু প্রোগ্রামিং প্রবলেম সমাধান করতে হয়। দ্বিতীয় স্টেজকে বলা হয় ‘ফোন ইন্টারভিউ’, যদিও এটি কম্পিউটারে ভিডিও কলেই করা হয়। এটি এক ঘণ্টার একটি টেকনিক্যাল ইন্টারভিউ। এ স্টেজ পার করলে ‘লুপ ইন্টারভিউ’য়ের জন্য ডাকা হয়, যাকে ‘ভার্চুয়াল অন সাইট’ ইন্টারভিউও বলে। এ স্টেজে একটানা পাঁচটি এক ঘণ্টার ইন্টারভিউ হয়েছে, যেখানে টেকনিক্যাল ও বিহেভিয়ারাল বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। এ স্টেজে ভালো করলে অফার পাওয়া যায়।

জাগো নিউজ: পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে কতটা সময় লাগতে পারে?
আল আমিন হোসেন: আমার জন্য পুরো প্রক্রিয়া শেষ হতে ২ মাস সময় লেগেছে। ইন্টারভিউয়ের তারিখ নির্ধারণের ব্যাপারে প্রার্থীকে বেশ ফ্লেক্সিবিলিটি দেওয়া হয়। এর ওপর নির্ভর করে ১ মাস থেকে ২ মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

জাগো নিউজ: আন্তর্জাতিক এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশিদের সুযোগ কেমন?
আল আমিন হোসেন: বাংলাদেশিরা এখন প্রায় সব ধরনের আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানে সুনামের সাথে বিচরণ করছে। দিন দিন এসব প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশি ইঞ্জিনিয়ারের সংখ্যা বাড়ছে। আমার ধারণা, সামনের কয়েক বছরে এটি খুব নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা হয়ে যাবে বাংলাদেশের জন্য।

জাগো নিউজ: যেসব তরুণ আমাজনে চাকরি করতে আগ্রহী, তাদের জন্য আপনার কী পরামর্শ থাকবে?
আল আমিন হোসেন: আমি বলবো, শিক্ষার্থী অবস্থায় স্পেসিফিক কোনো কোম্পানি টার্গেট না করে নিজের ফিল্ডে সেরা হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। নিজের সামর্থকে যাচাই করার চেষ্টা করতে হবে। প্রোগ্রামিং প্রবলেম সলভিং খুব ভালো পারলে কোনো স্পেসিফিক কোম্পানির জন্য প্রিপারেশন ৩ মাসেই নেওয়া সম্ভব। তাই ছাত্রাবস্থায় ভালো ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার চেষ্টা করতে হবে। পাশাপাশি প্রচুর প্রবলেম সলভিং প্র্যাকটিস আর নিত্য নতুন আইডিয়া নিয়ে কাজ করতে হবে।

জাগো নিউজ: আপনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী?
আল আমিন হোসেন: দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আছে, আসলে ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে আরও পরিণত হওয়া এবং আমার অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে দেশে ভালো একটি প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা। বাংলাদেশে শিক্ষাসংক্রান্ত প্রযুক্তি বিষয়ে কাজ করতে আমার বেশ আগ্রহ আছে। আপাতত একটি পডকাস্ট ধরনের প্রোগ্রাম শুরু করার ইচ্ছে আছে। যেখানে আমি দেশের সেরা কিছু ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে তাদের অভিজ্ঞতা নিয়ে গল্প করব। আমাদের দেশের অনেক মেধাবী মানুষ চমৎকার কিছু কাজ করছেন। তাদের অভিজ্ঞতাগুলো বাকিদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়া বেশ প্রয়োজন।

সুত্র- জাগো নিউজ