প্রতি বছরের মত এবারও অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহে বিভিন্ন বিষয়ে নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। ২ অক্টবর চিকিৎসা বিজ্ঞানের নোবেল বিজয়ীদের নাম প্রকাশের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে ৯ অক্টবরে অর্থনীতির নোবেল বিজয়ীদের নাম ঘোষণার মধ্যে দিয়ে শেষ হয়। এই বছরের ১০ ডিসেম্বর স্টকহোমে এবং অসলোতে পুরস্কার বিজয়ীদের মাঝে সরাসরি এই পুরস্কারের অর্থ ও সম্মাননা প্রদান করা হবে।

চলুন দেখে নেওয়া যাক ২০২৩ সালে চিকিৎসা , পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন, সাহিত্য, শান্তি ও অর্থনীতিতে বিশ্বের এই সম্মানজনক পুরুস্কার কারা পেলেন

বিভাগ

বিজয়ী

চিকিৎসা 

ক্যাটালিন কারিকো এবং ড্রু ওয়াইজম্যান

পদার্থবিদ্যা

পিয়েরে অ্যাগোস্টিনি, ফেরেঙ্ক ক্রাউজ এবং অ্যান ল’হুইলিয়ার

রসায়ন

মোউঙ্গি জি. বাউয়েন্দি, লুইস ই. ব্রুস এবং আলেক্সি আই. একিমভ

সাহিত্য

জন অলভ ফস

শান্তি

নার্গিস মোহাম্মদী

এখানে উল্লেখ্য যে, অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার মূল নোবেল পুরস্কারের অংশ নয়, এবং এটি নোবেল ফাউন্ডেশনের পরিবর্তে সুইডিশ রিক্স ব্যাংক দ্বারা প্রদান করা হয়। এটি “অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার” হিসাবে পরিচিত, তবে এটি আনুষ্ঠানিকভাবে আলফ্রেড নোবেলের স্মরণে সুইডিশ রিক্স ব্যাংক পুরস্কার।

 ২০২৩ সালের নোবেল পুরস্কারের বিস্তারিত 

চিকিৎসায় নোবেল পুরস্কার ২০২৩

বিজয়ীঃ  যৌথভাবে  ক্যাটালিন কারিকো এবং ড্রু ওয়াইজম্যান

অবদানঃ  নিউক্লিওসাইড বেস পরিবর্তন সম্পর্কিত আবিষ্কারের জন্য, যা কোভিড-১৯-এর বিরুদ্ধে কার্যকর mRNA ভ্যাকসিন তৈরিতে সাহায্য করেছে

ক্যাটালিন কারিকো

ক্যাটালিন কারিকোর জন্ম হাঙ্গেরিতে। তিনি একজন বায়োকেমিস্ট এবং মলিকুলার বায়োলজিস্ট। তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিনের একজন অধ্যাপক।

ড্রু ওয়েইসম্যান

ড্রু ওয়েইসম্যানের জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি একজন ইমিউনোলজিস্ট এবং ভাইরোলজিস্ট। তিনি পেনসিলভানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল অফ মেডিসিনের একজন অধ্যাপক।

পদার্থ বিদ্যায় নোবেল পুরস্কার ২০২৩

বিজয়ী: পিয়েরে অ্যাগোস্টিনি, ফেরেঙ্ক ক্রাউস এবং অ্যান ল’হুইলিয়ার

অবদান: পদার্থের ইলেকট্রন গতিবিদ্যা অধ্যয়নের জন্য আলোর অ্যাটো সেকেন্ড স্পন্দন তৈরি

পিয়েরে অ্যাগোস্টিনি

পিয়েরে অ্যাগোস্টিনির জন্ম ফ্রান্সে। তিনি একজন পদার্থবিদ এবং ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট-এটিনে অধ্যাপক।

ফেরেঙ্ক ক্রাউস

ফেরেঙ্ক ক্রাউসের জন্ম হাঙ্গেরিতে। তিনি একজন পদার্থবিদ এবং থিজসজেড ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজির অধ্যাপক।

অ্যান ল’হুইলিয়ার

অ্যান ল’হুইলিয়ারের জন্ম ফ্রান্সে। তিনি একজন পদার্থবিদ এবং ইকোল পলিটেকনিক ফেডেরালে ডি লাভেলের অধ্যাপক।

এই আবিষ্কারের কিছু প্রয়োগ:

  • নতুন উপকরণ এবং ডিভাইস তৈরি করা
  • রাসায়নিক এবং জৈবিক প্রক্রিয়া গুলো বোঝা
  • ঔষধ এবং চিকিৎসা গবেষণায়

রসায়নে নোবেল পুরস্কার ২০২৩

বিজয়ী: মুঙ্গি বাওয়েন্ডি, লুই ব্রুস এবং আলেক্সি ইয়াকিমভ

অবদান: কোয়ান্টাম ডটের আবিষ্কার, উন্নয়ন এবং ন্যানোক্রিস্টাল প্রযুক্তি বা ন্যানো পার্টিকেল আকার ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে

মুঙ্গি বাওয়েন্ডি

মুঙ্গি বাওয়েন্ডির জন্ম ফ্রান্সে। তিনি একজন রসায়নবিদ এবং ইউনিভার্সিটি অফ সেন্ট-ইটিনে অধ্যাপক।

লুই ব্রুস

লুই ব্রুস এর জন্ম মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি একজন রসায়নবিদ এবং স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।

আলেক্সি ইয়াকিমভ

আলেক্সি ইয়াকিমভ এর জন্ম রাশিয়ায়। তিনি একজন রসায়নবিদ এবং রাশিয়ান একাডেমি অফ সায়েন্সের একজন সদস্য।

তাদের অবদানের কিছু সম্ভাব্য প্রয়োগের মধ্যে রয়েছে:

  • নতুন আলোক উৎস এবং ডিসপ্লে তৈরি করা
  • উন্নত সৌর কোষ তৈরি করা
  • নতুন ওষুধ এবং চিকিৎসা পদ্ধতি তৈরি করা
  • পরিবেশ দূষণ কমানো

সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার ২০২৩  

বিজয়ী: জন ফস

অবদান: উদ্ভাবনী নাটক এবং গদ্য যা অকথ্যকে কণ্ঠ দেয়

জন ফস

জন ফসের জন্ম নরওয়েতে। তিনি একজন নাট্যকার, ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার এবং অনুবাদক।

ফসের কিছু উল্লেখযোগ্য কাজের মধ্যে রয়েছে:

  • নাটক: “এটি আমার জীবন”, “হাউস ফুল অফ বিউটিফুল থিংস”, “স্টিল লাইফ ইন দ্য ওয়াইল্ডারনেস”
  • উপন্যাস: “মোড”, “আমার মায়ের মুখ”, “আমার বোন”
  • ছোটগল্প সংগ্রহ:“দ্য ব্লাড স্পিল”, “দ্য ওয়াটার ওয়ান্ডারিং”, “দ্য ফায়ার ট্রিল”

ফসের কাজ বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হয়েছে। তিনি বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে নরওয়েজিয়ান গভর্নমেন্টের ইবসেন পুরস্কার এবং আন্তর্জাতিক ইবসেন পুরস্কার

নোবেল কমিটির মন্তব্য

নোবেল কমিটি বলেছে যে ফস

“আমাদের সময়ের একজন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লেখক, আমাদের বিশ্বকে নতুন উপায়ে দেখতে বাধ্য করে।”

ফসের এই পুরস্কারটি নরওয়েজিয়ান সাহিত্যের জন্য একটি বড় অর্জন। এটি নরওয়েজিয়ান সাহিত্যকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করেছে।

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার ২০২৩

বিজয়ী: নার্গিস মোহাম্মদী

অবদান: ইরানে নারীদের অধিকার এবং সবার জন্য মানবাধিকারের জন্য লড়াই করা

নার্গিস মোহাম্মদী

নার্গিস সাফিয়ে মোহাম্মদী  জন্ম ২১শে এপ্রিল ১৯৭২, একজন ইরানি মানবাধিকারকর্মী এবং ডিফেন্ডারস অফ হিউম্যান রাইটস সেন্টার-এর উপ-প্রধান। মোহাম্মাদি ইরানে নারীদের অধিকারের জন্য এবং সাধারণ মানুষের মানবাধিকারের জন্য লড়াই করে চলেছেন।

তিনি নারীদের অধিকারের জন্য প্রচারণা চালিয়েছেন, নারীদের বিরুদ্ধে সহিংসতার বিরুদ্ধে কথা বলেছেন এবং নারীদের জন্য শিক্ষা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগের জন্য কাজ করেছেন। এইসব কাজের জন্য সরকারের রোষানলে পড়েন তিনি এবং ২০১৬ সালের মে মাসে তেহরানে ১৬ তার বছরের জন্য কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। “মৃত্যদণ্ড রদ” করার পক্ষে প্রচারাভিযান চালানো একটি মানবাধিকার আন্দোলন পরিচালনা করার জন্য তাকে এই শাস্তি দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে তিনি, ১৩ বার গ্রেপ্তার হয়েছেন, পাঁচবার দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন, এবং মোট ৩১ বছরের কারাদণ্ড এবং ১৫৪টি বেত্রাঘাতের শাস্তি পেয়েছেন।

মোহাম্মদী তার কাজের জন্য নোবেল বাদেও বেশ কয়েকটি পুরস্কার পেয়েছেন, যার মধ্যে রয়েছে ২০১০ সালে শিরিন এবাদির থেকে ফেলিক্স এরমাকোরা মানবাধিকার পুরস্কার।

 অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার ২০২৩

বিজয়ী: ক্লডিয়া গোল্ডিন।

অবদান:মহিলাদের শ্রম উন্নয়নে বিশেষ দিশা দেখানোর স্বীকৃতি হিসাবেই যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ক্লডিয়া গোল্ডিনকে অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারের জন্য তাকে মনোনীত করে নোবেল কমিটি।