Spoken+Grammar Bundle

আগামী তিন বছরে বাংলাদেশকে ১৫০ কোটি ডলার বাজেট সহায়তা দেওয়ার কথা রয়েছে বিশ্বব্যাংকের। তবে এ ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এক ডজন শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এসব শর্তের মধ্যে রয়েছে- জ্বালানি খাতের দক্ষতা বৃদ্ধি, নবায়নযোগ্য জ্বালানি নীতি প্রণয়ন ও কার্বন কর আরোপের পদক্ষেপ। শর্তগুলোর বেশিরভাগই সরকারের রাজস্ব এবং আর্থিক খাতের সংস্কারের সঙ্গে সম্পর্কিত। সংস্কারের প্রশ্নে সরকারের সাহসী নীতি ও সিদ্ধান্ত থাকলে বাংলাদেশ বিশ্বব্যাংকের কাছ থেকে আরও বেশি পরিমাণ ঋণ পেতে পারে।

জানা গেছে, ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্প্রতি এক বৈঠকে বাংলাদেশকে এসব শর্ত জানিয়ে দেওয়া হয়। গত সপ্তাহে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং আন্তর্জাতিক বিভিন্ন কারণে বৈদেশিক মুদ্রার সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। পরিস্থিতি সামাল দিতে গত জুনে বিশ্বব্যাংকের কাছে বাজেট সহায়তা আকারে ঋণ চাওয়া হয় বাংলাদেশের পক্ষ থেকে।

জানা গেছে, বিশ্বব্যাংকের ১৫০ কোটি ডলার ঋণের মধ্যে ২৫ কোটি ডলার পাওয়া যাবে বাংলাদেশ গ্রিন, রেজিল্যান্ট অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডেভেলপমেন্ট পলিসি ক্রেডিট (জিআরআইডি ডিপিসি) কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য। একই পরিমাণ অর্থ দেওয়া হবে বাংলাদেশ সেকেন্ড রিকভারি অ্যান্ড রিজিলেন্স (ডিপিডিসি) স্কিম বাস্তবায়নে। বাকি ১০০ কোটি ডলার কোন খাতে কাজে লাগানো হবে, সে সিদ্ধান্ত এখনও নেওয়া হয়নি। বিশ্বব্যাংকের দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক ভাইস প্রেসিডেন্ট মার্টিন রেইজারের ঢাকা সফরের সময় এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হতে পারে। আগামী সপ্তাহে তিনি ঢাকা সফরে আসছেন।

সূত্র জানায়, বাংলাদেশ শর্ত পূরণ করলে তা আবার আগামী এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় বিশ্বব্যাংকের বোর্ডে অনুমোদনের প্রয়োজন হবে। অনুমোদন পেলে পরবর্তী ৩ বছরে প্রতি বছর এক কিস্তি হিসেবে জিআরআইডি ডিপিসি কর্মসূচিতে অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আগামী বছর থেকেই কিস্তি শুরু হতে পারে। জানা গেছে, জাতীয় শুল্ক্কনীতি প্রণয়নে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে এখন মন্ত্রিসভার অনুমোদনের অপেক্ষায়। এ শুল্ক্কনীতিতে শুল্ক্ক কমানো এবং শুল্ক্ক কাঠামো সহজতর করা হচ্ছে। অনুমোদন পেলে আগামী অর্থবছর থেকে এ নীতি কার্যকর হবে। এতে আমদানি পর্যায়ে গড় শুল্ক্ক ২৫ শতাংশে নেমে আসতে পারে। বর্তমানে এ হার

২৯ দশমিক ৬ শতাংশ।

জানতে চাইলে গবেষণা সংস্থা পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর সমকালকে বলেন, বিশ্বব্যাংক যেসব সংস্কারের পরামর্শ দিয়েছে, তা শিল্পায়ন এবং অর্থনীতির জন্য সহায়ক তো বটেই; বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক সহায়ক হবে। এগুলো জাতীয় উন্নয়নের সঙ্গে খুব প্রাসঙ্গিক। জ্বালানি সক্ষমতা বৃদ্ধি কিংবা নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানো তো খুবই প্রয়োজন। তবে প্রশ্ন হচ্ছে, সরকার আদৌ এসব সংস্কার করবে কিনা। করলে কবে নাগাদ করবে। সব শর্ত এখনই পূরণ করতে হবে- এমন নয়।

বিশ্বব্যাংকের অন্য গুরুত্বপূর্ণ শর্তের মধ্যে রয়েছে- অটোমেটেড চালান পদ্ধতি চালু করা। আগামী ২০২৩-২৪ অর্থবছরের মধ্যে এ পদ্ধতি চালু করার শর্ত রয়েছে। এর মাধ্যমে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) রাজস্ব আহরণ বাড়বে। আয়কর এবং ভ্যাট অন্তত ৬৪ শতাংশ বেড়ে যাবে।

সরকারের ক্রয় কার্যক্রমে ইলেকট্রনিক প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমের শতভাগ বাস্তবায়নেরও শর্ত রয়েছে বিশ্বব্যাংকের। সরকারের ক্রয় কার্যক্রম শতভাগ ইলেকট্রনিক প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমে আনা গেলে লিড টাইম অর্থাৎ দরপত্র আহ্বান থেকে কার্যাদেশকাল কমে আসবে অন্তত ২০ দিন। এখন লিড টাইমে ৭০ দিন পর্যন্ত লেগে যায়। ইলেকট্রনিক প্রকিউরমেন্ট সিস্টেমের শতভাগ বাস্তবায়ন হলে লিড টাইম ৫০ দিনে নেমে আসবে। এ সিস্টেম বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকারি ক্রয় কর্তৃপক্ষ আইন প্রণয়নের প্রয়োজন হবে। এ রকম আরও কিছু সংস্কারের শর্ত দেওয়া হয়েছে বিশ্বব্যাংকের পক্ষ থেকে।