চার বছর আগের ইংল্যান্ড বিশ্বকাপের ফাইনালে ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ডকে আলাদা করতে সহায়তা নিতে হয়েছিল ‘বাউন্ডারি কাউন্টব্যাক’ নামের অদ্ভুত এক নিয়মের। ফাইনালে সুপার ওভার টাই হওয়ার পর যে নিয়মের কারণে কিউইদের হৃদয় ভেঙে শিরোপা জিতেছিল ইংলিশরা। চার বছর পর আজ আহমেদাবাদে বিশ্বকাপ শুরুর ম্যাচে দুই দলের হারজিতের পার্থক্যটা ধরা দিল মোটা দাগেই। বোলারদের সম্মিলিত পারফরম্যান্সের পর ডেভন কনওয়ে ও রাচিন রবীন্দ্রর জোড়া সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডকে গুঁড়িয়ে নিউজিল্যান্ড যেন দিল ২০২৩ বিশ্বকাপে তাদের আগমনী বার্তা।

২৮৩ রানের লক্ষ্যে নিউজিল্যান্ডের জয়ের ব্যবধান ৯ উইকেটের। সে জয়ও এসেছে ৮২ বল বাকি থাকতেই। উদ্বোধনী ম্যাচে নরেন্দ্র মোদি স্টেডিয়ামের দর্শকসংখ্যা প্রত্যাশা মেটাতে পারেনি। নিউজিল্যান্ডও বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের বিপক্ষে ম্যাচটিকে বানিয়ে ফেলেছে একপেশে, ম্যাড়মেড়ে। কনওয়ে ও রবীন্দ্র তো ইংল্যান্ডকে প্রায় ফিরিয়ে দিয়েছেন সর্বশেষ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে তাদের দুর্দান্ত রানতাড়ার স্মৃতিও, যেখানে ইংল্যান্ড জিতেছিল ১০ উইকেটে। আজ কনওয়ে অপরাজিত ছিলেন ১২১ বলে ১৫২ রানে, রবীন্দ্র ১২৩ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন ৯৬ বলে। দুজন মিলেই মেরেছেন ৩৮টি বাউন্ডারি, ইংল্যান্ডের পুরো ইনিংসে সংখ্যাটা ২৭।

রান তাড়ায় ১০ রানে উইল ইয়াংকে হারিয়ে ফেলার স্মৃতিও ভুলিয়ে দিয়েছেন দুজন। দ্বিতীয় উইকেটে তাঁদের জুটি ২৭৩ রানের, বিশ্বকাপে যেকোনো উইকেটেই যেটি সর্বোচ্চ। ২২তম ইনিংস খেলা কনওয়ের এটি পঞ্চম সেঞ্চুরি, ১৩তম ওয়ানডেতে রবীন্দ্রর প্রথম। নিয়মিত অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন নেই, তাঁর জায়গাতেই তিনে পাঠানো হয় অলরাউন্ডার রবীন্দ্রকে। দলের প্রত্যাশার প্রতিদান এ বাঁহাতি দিয়েছেন দারুণভাবেই।

রবীন্দ্র ও কনওয়ে গড়েছেন বিশ্বকাপে নিউজিল্যান্ডের সর্বোচ্চ জুটি

তাঁদের কারও সামনেই ইংল্যান্ডের বোলিং দাঁড়াতে পারেনি। পেসাররা তো লেংথই ঠিক করতে পারেননি। হয় বেশি শর্টে করেছেন, নাহলে এমন ফুললেংথে গিয়েছেন, যাতে বলের লাইনে গিয়ে খেলতে অসুবিধা হয়নি কনওয়েদের। দলের অন্যতম বড় অস্ত্র আদিল রশিদও সুবিধা করতে পারেননি, ৭ ওভারে দিয়েছেন ৪৭ রান। আহমেদাবাদের উইকেটে মার্ক উডের গতি হয়ে গেছে বুমেরাং—এ ফাস্ট বোলারের ৫ ওভারে এসেছে ৫৫ রান। ভাগ্য মোটেও ইংল্যান্ডের পক্ষে যায়নি, ফ্লাডলাইটের আলোয় শিশিরের প্রভাবে তাদের কাজটি হয়ে পড়ে আরও কঠিন। অথচ ম্যাচের মাঝপথে ইংল্যান্ডের ২৮২ রানকে নেহায়েত মন্দ মনে হচ্ছিল না। শুরুর আঘাতের পর তো ইংল্যান্ড সেটি নিয়ে অনেক লড়াই করার আভাসও দিয়েছিল। কিন্তু কনওয়ে আর রবীন্দ্র ভেবেছিলেন ভিন্ন কিছুই।

কনওয়ে-রবীন্দ্রর এমন ব্যাটিংয়ের দিনে কিউই বোলারদের পারফরম্যান্স আড়ালে চলে গেলে তা একটু অন্যায্যই হবে। বেন স্টোকস চোটের কারণে না থাকলেও ইংল্যান্ডের ব্যাটিং লাইনআপ ছিল বেশ লম্বা। তা কমবেশি সবাই অবদান রেখেছেন। তবে জো রুটের ৮৬ বলে ৭৭ রানের ইনিংসটা হয়ে থেকেছে সর্বোচ্চ।

আরও পড়ুন

 বিশ্বকাপের পর্দা উঠছে আজ

ইনিংসের দ্বিতীয় বলে ট্রেন্ট বোল্টকে ছক্কা মারেন জনি বেয়ারস্টো। প্রথম ১০ ওভারে ৫১ রানে ১ উইকেট—অষ্টম ওভারে ওপেনিং জুটি ভাঙলেও শুরুটা ভালোই ছিল ইংল্যান্ডের। তবে মাঝের ওভারগুলোতে নিয়মিত উইকেট হারায় তারা। ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক টম ল্যাথাম বোলারদের ব্যবহার করেছেন দারুণভাবে।

গত বিশ্বকাপের পর থেকে ১১-৪০ ওভারের মধ্যে নিউজিল্যান্ড বোলারদের স্ট্রাইক রেট সুবিধার নয়—এ ক্ষেত্রে তারা শুধু নেদারল্যান্ডসের চেয়েই এগিয়ে। সেই দলটাই এ ম্যাচে মাঝের ওভারগুলোতে নিয়েছে ৫ উইকেট। টিম সাউদি ও লকি ফার্গুসনের অনুপস্থিতিতে ল্যাথামের হাতে পেস অপশন বলতে ছিলেন শুধু বোল্ট ও ম্যাট হেনরি। তাঁদেরও মাঝের ওভারগুলোতে এনে সফল ল্যাথাম।

 

পেসারদের নাকল বল, স্পিনারদের গতির বৈচিত্র্য, ব্যাটসম্যানভেদে আঁটসাঁট লাইন-লেংথ—নিউজিল্যান্ড বোলাররা ছিলেন দুর্দান্ত। বাঁহাতি স্পিনার মিচেল স্যান্টনার ১০ ওভারে ৩৭ রান দিয়ে নেন ২ উইকেট, তবে তাঁর ওভারে কোনো বাউন্ডারিই আসেনি। ২০১৮ সালের পর প্রথমবারের মতো কোনো বোলার কোনো বাউন্ডারি না দিয়েই ১০ ওভার পার করলেন। আলাদা করে বলতে হবে গ্লেন ফিলিপসের কথাও। গুরুত্বপূর্ণ দুটি ব্রেকথ্রু এনে দেন এ পার্টটাইমার। মঈন আলী সুইপ ও রুট রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হন তাঁর বলে। জস বাটলার, হ্যারি ব্রুকরাও বেশ ভালো শুরু পেলেও কাজে লাগাতে পারেননি।

অবশ্য রুট যতক্ষণ ছিলেন, ইংল্যান্ডের ৩০০-পেরোনো স্কোর ছিল নাগালের মধ্যেই। বোল্টকে রিভার্স স্কুপে মারা ছক্কা ছিল রুটের ইনিংসের প্রথম বাউন্ডারি, যদিও ৮৯.৫৩ স্ট্রাইক রেটের ইনিংসে তিনি সব মিলিয়ে বাউন্ডারি পার করেছেন মাত্র ৫ বার। পরে রবীন্দ্র ছক্কাই মেরেছেন ৫টি।

‘বাউন্ডারি কাউন্টব্যাক’-এর নিয়ম আইসিসি বদলে ফেলেছে অনেক আগেই। তবে সেটি থাকলেও ইংল্যান্ড আজ পাত্তা পেত না নিউজিল্যান্ডের কাছে। চার বছর পর হলেও ইংল্যান্ডকে জবাবটা ঠিকই দিয়েছে নিউজিল্যান্ড।

সুত্র-প্রথম আলো