Page 1 of 2
বাগধারা শব্দের আভিধানিক অর্থ কথার বচন ভঙ্গি বা ভাব বা কথার ঢং। বাক্য বা বাক্যাংশের বিশেষ প্রকাশভঙ্গিকে বলা হয় বাগধারা। বিশেষ প্রসঙ্গে শব্দের বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফলে বাংলায় বহু বাগধারা তৈরী হয়েছে। এ ধরনের প্রয়োগের পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ আভিধানিক অর্থ ছাপিয়ে বিশেষ অর্থের দ্যোতক হয়ে ওঠে।
যে পদগুচ্ছ বা বাক্যাংশ বিশিষ্টার্থক প্রয়োগের ফলে আভিধানিক অর্থের বাইরে আলাদা অর্থ প্রকাশ করে, তাকে বলা হয় বাগধারা।
বাগধারা ভাষাকে সংক্ষিপ্ত করে, ভাবের ইঙ্গিতময় প্রকাশ ঘটিয়ে বক্তব্যকে রসমধুর করে উপস্থাপন করে। এদিক থেকে বাগধারা বাংলা সাহিত্যের বিশেষ সম্পদ। বাগধারা গঠনে বিভিন্ন শব্দের ব্যবহারকে শব্দের রীতিসিদ্ধ প্রয়োগও বলা হয়। একে বাগবিধিও বলা হয়ে থাকে।
বাগধারা উদাহরণ :
- অকালকুষ্মাণ্ড(অপদার্থ) – মন্টুর মতো অকালকুষ্মাণ্ড ছেলেকে দিয়ে এ কাজ সম্পন্ন হবে কিছুতেই সেই আশা করা যায় না।
- অকূলপাথর(মহাবিপদ) – আহাম্মদ সাহেবের অকাল মৃত্যু তাঁর পুরো পরিবারকে অকূলপাথরে ভাসালো।
- অক্কা পাওয়া(মরে যাওয়া) – এরকম বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালালে সহজেই অক্কা পেতে হবে।
- অগস্ত্য যাত্রা(চির প্রস্থান, শেষ বিদায়)- ভক্তদেরকে শোক সাগরে ভাসিয়ে মহানায়ক অগস্ত্য যাত্রা করলেন।
- অগাধ জলের মাছ(অত্যন্ত চালাক)- লোকটি যে এতটা অগাধ জলের মাছ তা আমি আগে টের পাইনি।
- অগ্নি পরীক্ষা(কঠিন পরীক্ষা) – সাহস হারালে জীবনের এই অগ্নি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে কি করে?
- অচল পয়সা(অকেজো হয়ে পড়া, মূল্যহীন)- এ সমাজে বৃদ্ধ লোকেরা অচল পয়সার মতো।
- অথৈ জলে পড়া(মস্ত বিপদে পড়া) – অকালে স্বামী হারিয়ে মেয়েটি একেবারে অথৈ জলে পড়েছে।
- অদৃষ্টের পরিহাস(ভাগ্যের বিড়ম্বনা) – অদৃষ্টের পরিহাসে রাজা-বাদশাও পথের ফকির হয়ে যায়।
- অনুরোধে ঢেঁকি গেলা(পরের অনুরোধে কষ্ট স্বীকার করা)- বন্ধুত্ব রক্ষা করতে গিয়ে অনেক সময় অনুরোধে ঢেঁকি গিলতে হয়।
- অন্তরটিপুনি(অলক্ষে অন্যের হৃদয়ে আঘাত দেয়া) – অন্তরটিপুনি স্বভাব অনেক সময় দাম্পত্য কলহের কারন হয়ে দাঁড়ায়।
- অন্ধকারে ঢিল মারা(অনুমানের সাহায্যে উদ্দেশ্য হাসিল করা) – অন্ধকারে ঢিল মারা স্বভাবটা বাদ দাও, কবে যে ঢিল তোমার পিঠেই এসে পড়বে কে জানে।
- অন্ধি-সন্ধি(গোপন তথ্য) – নিজেকে তুমি আর লুকাতে পারবে না, তোমার অন্ধি-সন্ধি আমি জেনে ফেলেছি।
- অন্ধের ষষ্ঠী(একমাত্র অবলম্বন) – বিধবা মায়ের অন্ধের ষষ্ঠী পুত্রটিও শেষে মারা গেল।
- অমাবস্যার চাঁদ(অদর্শনীয় বস্তু, দুর্লভ বস্তু) – আজকাল তোমাকে দেখাই যায় না, চাকরি পেয়ে কি অমাবস্যার চাঁদ হয়ে গেলে?
- অমৃতে অরুচি(মূল্যবান জিনিসের প্রতি অনীহা) – এত সুন্দর চাকরিটা জুট করে ছেড়ে দিলে, অমৃতে অরুচি ধরেছ নাকি?
- অরণ্যে রোদন(নিষ্ফল আবেদন)- কৃপণের কাছ ধন চাওয়া আর অরণ্যে রোদন করা সমান কথা।
- অর্ধচন্দ্র দেওয়া(গলা ধাক্কা দেওয়া) – লোকটি চাঁদা চাইতে এসেছিল কিন্তু তাকে অর্ধচন্দ্র দিয়ে বিদায় করা হলো।
- অহিনকুল-সম্বন্ধ(চির-শত্রু, ভীষণ বৈরীভাব) – তারেক সাহের এবং সাদেক সাহেব পাশাপাশি বাড়িতে বাস করেন কিন্তু তাদের মধ্যে অহিনকুল-সম্বন্ধ।
- আঁতে ঘা(মনকষ্ট) – এমনিতেই ভালই, কিন্তু টাকা চাইলেই তোমার আঁতে ঘা লাগে।
- আকাট মূর্খ(জ্ঞানহীন) – কে বলবে সে শিক্ষিত, এত এত বিদ্যা পেটে পুরেও শেষ পর্যন্ত সে আকাট মূর্খই রয়ে গেল।
- আকাশ ভেঙে পড়া(মহাবিপদ) – বাবার মৃত্যু সংবাদ পেয়ে শারমিনের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল।
- আকাশকুসুম(অসম্ভব কল্পনা) – ওসব আকাশকুসুম ভেবে সময় নষ্ট করে লাভ নেই, বাস্তবে ফিরে এস।
- আকাশ-পাতাল(দুস্তর ব্যবধান) – হাবিব ও হাসান সহোদর ভাই, কিন্তু দুজনের চরিত্রে আকাশ-পাতাল ব্যবধান।
- আকাশে তোলা(মাত্রাতিরিক্ত প্রশংসা) – প্রশংসা করতে করতে তাকে আকাশে তুলেছ তো এখন আর কাউকে সে পাত্তাই দেয় না।
- আক্কেল গুড়ুম(স্তম্ভিত) – এইটুকু ছেলের কথা শুনে আমার তো আক্কেল গুড়ুম।
- আক্কেল দাঁত(বুদ্ধির পরিপক্বতা) – এসব কঠিন কথার মর্ম তুমি বুঝবে না; তোমার তো দেখি আক্কেল দাতই গজায়নি।
- আক্কেল সেলামী(নির্বুদ্ধিতার শাস্তি) – বিনা টিকেটে যারা রেল ভ্রমণ করে তাদেরকে মাঝে মধ্যে আক্কেল সেলামী দিতে হয়।
- আখের গোছানো(স্বার্থ হাসিল করা) – লোকটাকে দেখে তো ভালই মনে হয়েছিল, কিন্তু সে যে সবার সর্বনাশ করে আখের গোছাবে কে জানে?
- আগুন নিয়ে খেলা(বিপদের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করা) – ছাপোষা কর্মচারী হয়ে মাকিলের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছ; এ যে আগুন নিয়ে খেলা তা একবার ভেবে দেখেছ?
- আগুন লাগা সংসার(ভেঙে যাচ্ছে এমন সংসার) – আজীবন শুধু সুখ সুখ করছ, কিন্তু এমন আগুন লাগা সংসারে সুখ আসবে কি করে!
- আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ(হঠাত বড় লোক হওয়া) –যারা আঙ্গুল ফুলে কালাগাছ হয় তারা ধরাকে সরজ্ঞান করে।
- আটকপালে(হতভাগা) – বিয়ের দিন না পেরোতেই স্বামী হারালো, কী আটকপালে মেয়েরে বাবা!
- আঠার মাসে বছর(দীর্ঘসূত্রিতা) – সাত দিনের মধ্যে সে কিছতেই একাজ সম্পন্ন কতে পারবে না- তার তো আঠার মাসে বছর।
- আদাজল খেয়ে লাগা(উঠে পরে লাগা, সবিশেষ চেষ্টা) – সে তো তোমার কোন ক্ষতি করেনি; তাঁর ক্ষতি করার জন্য তুমি এভাবে আদাজল খেয়ে লেগেছ কেন?
- আদায়-কাচঁকলায়(শত্রুতা) – তারা একই এলাকার লোক কিন্তু দুজনে আদায়-কাচঁকলায় সম্পর্ক।
- আধাঁর ঘরের মানিক(অতি প্রিয় বস্তু) – এক মাত্র এই পুত্র সন্তাটিই বিধবা মায়ের আধাঁর ঘরের মানিক।
- আপন পায়ে কুড়াল মারা(নিজের অনিষ্ট করা) – দুষ্ট লোকের পাল্লায় পড়ে মেয়েটা আপন পায়ে কুড়াল মারলো।
- আমড়া কাঠের ঢেঁকি(অপদার্থ) – তোমাকে বললাম একটা কর্মঠ ছেলে এনে দিতে, আর তুমি এনে দিলে একটা আমড়া কাঠের ঢেঁকি।
- আষাঢ়ে গল্প(আজগুবি গল্প) – যুগ পাল্টেছে, এখন আর আষাঢ়ে গল্প কেউ শোনে না।
- ইঁদুর কপালে(মন্দ ভাগ্য) – এতো কষ্ট করেও সুখের মুখ দেখলে না, তুমি আসলেই একটা ইঁদুর কপালে।
- ইচঁড়ে পাকা(অকালপক্ব) – ছেলেটা এমন ইচঁড়ে পাকা হয়েছে যে, সব কিছতেই মুরুব্বীয়ানা ফলাতে চায়।
- ইতরবিশেষ(বৈষম্য) – ধনী-গরীবের এই ইতরবিশেষ ভুলে গিয়ে মানুষকে মানুষের মর্যাদা দাও।
- উঠতে বসতে(সব সময়) – শ্বশুরের কাছ থেকে যৌতুকের অর্থ গ্রহন করেছ – এখন উঠতে বসতে বুয়ের খোটা শুনতেই হবে।
- উড়নচণ্ডী(অমিতব্যয়ী) -উড়নচণ্ডী ছেলেটাকে নিয়ে বাবা-মা বিপদে পড়েছে।
- উড়ে এসে জুড়ে বসা(অযাচিতভাবে এসে সর্বেসর্বা হওয়া) – তুমি কে হে উড়ে এসে জুড়ে বসেছ?
- উত্তম-মধ্যম(প্রহর) – উত্তম-মধ্যম দিয়ে গ্রামবাসীরা চোরটাকে ছেড়ে দিল।
- উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে(একজনের অপরাধ অন্যের উপর চাপানো) – অসাধু লোকেরা বরাবরই উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে চাপাতে চায়।
- উভয় সংকট(দু’দিকেই বিপদ) – বড় সাহেবের কথামতো না চললে চাকরি যাবে, এদিকে জ্বলজ্যান্ত মিথ্যেয়াকেও হজম করতে পারছিনা- আমি পড়েছি উভয় সংকটে।
- উলুবনে মুক্তা ছড়ানো(অপাত্রে দান) – চোরের কাছে ধর্মের কাহিনী বলা আর উলুবনে মুক্তা ছড়ানো একই কথা।
- ঊনপঞ্চশ বায়ু(পাগলামি) – ওর সামনে বিয়ের কথা তুল না, এখনি কিন্তু ঊনপঞ্চাশ বায়ু বেড়ে যাবে।
- ঊনপাঁজুরে(হতভাগ্য) – মিছিমিছি ঊনপাঁজুরে বলে মেয়েটার মন কেন খারাপ করে দিচ্ছ; দেখবে একদিন সে ঠিকই সৌভাগ্যের মুখ দেখবে।