অধিনায়ক কেইন উইলিয়ামসন নেই, অন্যতম প্রধান পেসার টিম সাউদিও না। তবুও আগের ম্যাচে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে দিয়েছিল নিউজিল্যান্ড। হায়দরাবাদে ১২ বছর পর বিশ্বকাপ খেলতে আসা নেদারল্যান্ডস সেখানে হওয়ার কথা ছিল সহজ প্রতিপক্ষই। শেষ পর্যন্ত হয়েছে সেটিই। কিউইরা জিতেছে ৯৯ রানের বড় ব্যবধানে। শেষ দিকে ঝোড়ো ইনিংস খেলার পর ৫ উইকেট নিয়ে নায়ক মিচেল স্যান্টনার।

অন্যদিকে পাকিস্তানের বিপক্ষে সুযোগ তৈরি করেও কাজে লাগাতে না পারার আক্ষেপটা এ ম্যাচেও কিছুটা সঙ্গী হয়েছে নেদারল্যান্ডসের। ফিল্ডিংয়ে সুযোগ হাতছাড়া করার পর শেষ দিকে বোলিংয়ে খেই হারিয়ে ফেলে তারা। ব্যাটিংয়ে কয়েকটি ইনিংস ও জুটির শুরু আশাজাগানিয়া হলেও ফলপ্রসূ হয়নি সেসব।টসে হারার পর নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিংয়ের শুরুটা ঠিক ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ওই ম্যাচের মতো ছিল না। প্রথম ৩ ওভারে তো রানই আসেনি কোনো। ২০০৩ সালের পর এই প্রথম বিশ্বকাপে কোনো দল প্রথম রান করতে ৩ ওভার বা এর বেশি খেলল। তবে প্রথম ১০ ওভারে ডেভন কনওয়ে ও উইল ইয়াংয়ের জুটি ঠিকই তোলে ৬৩ রান, চতুর্থ থেকে নবম ওভারের মধ্যেই আসে ১২টি বাউন্ডারি।

আগের ম্যাচে দেড় শ করা কনওয়ে অবশ্য আজ ইনিংস বড় করতে পারেননি, রোলফ ফন ডার মারওয়ের বলে ক্যাচ দিয়ে তিনি থামেন ১৩তম ওভারে। তিনে আসা রাচিন রবীন্দ্র ভালো সঙ্গ দেন উইল ইয়াংকে। দুজনই পান ফিফটির দেখা, দ্বিতীয় উইকেটে তাঁদের জুটি ৭৭ রানের। শুরুতে রানআউটের হাত থেকে বেঁচে যাওয়া রবীন্দ্র শেষ পর্যন্ত ফন ডার মারওয়ের দ্বিতীয় শিকার হয়ে থামেন ৫১ রান করে। এর আগে সেঞ্চুরি থেকে ৩০ রান দূরেই থামেন ইয়াং।

তবে ভালো ভিত পেয়ে যাওয়া নিউজিল্যান্ড যে দ্রুতগতিতে এগোবে, সেটি জানা কথাই ছিল। ড্যারিল মিচেল ও অধিনায়ক টম ল্যাথামের ব্যাটিং-ও বলছিল সেটিই। ৪৭ বলে দুজনের জুটিতে আসে ৫৩ রান। মিচেলকেও সুযোগ দেয় নেদারল্যান্ডস। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে ফিল্ডিংয়ের জন্য ‘বিখ্যাত’, এ ম্যাচে অভিষিক্ত ৩৫ বছর বয়সী সিব্র্যান্ড এঙ্গেলব্রেখটের হাতে তিনি জীবন পান ২২ রানে। তবে মিচেল, গ্লেন ফিলিপস ও মার্ক চাপম্যান—নিউজিল্যান্ডের লেট মিডল অর্ডারের তিন বিস্ফোরক ব্যাটসম্যানকে ১৬ রানের মধ্যে ফিরিয়ে ম্যাচে ফেরার ইঙ্গিত দেয় ডাচরা।

৪৫তম ওভারের শুরুতে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৫৪ রান, নিউজিল্যান্ডকে ৩০০ রানের নিচে আটকে রাখা তখন ভালোভাবেই সম্ভব ছিল নেদারল্যান্ডসের জন্য। কিন্তু শেষে এসে স্যান্টনারের কবলে পড়ে তারা। ১৭ বলে ৩৬ রানের ইনিংসের পথে ল্যাথাম ও ম্যাট হেনরিকে নিয়ে দুটি জুটিতে ৩৬ বলে ৬৮ রান যোগ করেন স্যান্টনার, নিউজিল্যান্ড ৩০০ পেরিয়ে যায় ৩২২ রান পর্যন্ত।

৩২৩ রানের লক্ষ্য ছুঁতে নেদারল্যান্ডসকে গড়তে হতো নিজেদের রেকর্ড, এর আগে সর্বোচ্চ ২৯১ রান তাড়া করে জিতেছিল তারা। অবশ্য গত জুনে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে ৩৭৪ রানের লক্ষ্যে ম্যাচ টাই করে পরে সুপার ওভারে জেতে তারা। কিন্তু হায়দরাবাদে সেসব অনুপ্রেরণা হতে পারেনি ডাচদের।

বড় রান তাড়ায় যেমন শুরু দরকার, তাদের হয় ঠিক বিপরীত। প্রথম তিনটি জুটিই ২০ রান পেরিয়েছে, তিনটিই থেমেছে ২৫ রানের আগে। এর মধ্যে তৃতীয়টি ভাঙে লং অফে ট্রেন্ট বোল্টের নেওয়া বাস ডি লিডির দারুণ এক ক্যাচে। ৬৭ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর অবশ্য মেরামতের কাজটি ভালোভাবেই করছিলেন কলিন অ্যাকারম্যান ও তেজা নিদামানুরু। ভুল–বোঝাবুঝিতে নিদামানুরু রানআউট হলে অসময়েই শেষ হয় সে কাজ। কার্যত এরপর আর দাঁড়াতে পারেনি নেদারল্যান্ডস, এঙ্গেলব্রেখটের শেষ দিকে খেলা ২৯ রানের ইনিংস ব্যবধানই যা কমিয়েছে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর
নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ৩২২/৭ ইয়াং ৭০, রবীন্দ্র ৫১, মিচেল ৪৮, ল্যাথাম ৫৩, স্যান্টনার ৩৬*, হেনরি ১০; আরিয়ান ২/৬২, ফন মিকেরেন ২/৫৯, ফন ডার মারওয়ে ২/৫৬, ডি লিডি ১/৬৪, বিক্রমজিত ০/৯)
নেদারল্যান্ডস: ৪৬.৩ ওভারে ২২৩ (অ্যাকারম্যান ৬৯, এডওয়ার্ডস ৩০, এঙ্গেলব্রেখট ২৯; হেনরি ৩/৪০, স্যান্টনার ৫/৫৯, রবীন্দ্র ১/৪৬)
ফল: নিউজিল্যান্ড ৯৯ রানে জয়ী  
ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মিচেল স্যান্টনার

সুত্র-প্রথম আলো