এই আর্টিকেলে যা বলা হবে তা গবেষণায় প্রাপ্ত হয়েছে। তথ্যগুলো ইন্টারনেট থেকে সংগ্রহ করা হয়েছে।


জন্মের ওজন সময় নবজাতকের ওজন ২৫০০ গ্রাম হওয়া বাঞ্ছনীয় । বাংলাদেশে প্রাতবছর ৬ লাখের বেশি শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মায় । এক গবেষণায় সম্প্রতি জানা গেল যে , কম ওজন নিয়ে যেসব নারী - পুরুষ জন্মেছিলেন , প্রাপ্ত বয়সে তাঁদের মধ্যে স্থূলতা , ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ সঠিক ওজন নিয়ে জন্মানাে নারী - পুরুষের চেয়ে বেশি । কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুরা পরিণত বয়সে স্থূল হওয়ার ঝুঁকিতে পড়ে । আর বয়স্ক তুলে এদের মধ্যে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের  প্রবণতাও বেশি দেখা যায়

কম জন্ম - ওজন ও তার সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী অসংক্রামক রােগের সম্পর্ক নিয়ে চীনের করা এক গবেষণায় এ তথ্য উঠে এসেছে ।

 গবেষকেরা বলছেন , জীবনের শুরুর দিকের পুষ্টি - পরিস্থিতি পরবর্তী জীবনে প্রভাব ফেলে । জন্মের সময় ওজন কম হলে পরবর্তী জীবনে শারীরিক গঠন কী হবে , তার কোনাে সরল উত্তর নেই। তবে স্থূলতা , ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি এদের বেশি থাকে । 

চীনের সাংহাইয়ের ১১ হাজার ৫১৫ জন পুরুষ ও ১৩ হাজার ৫৬৯ জন নারীর ওপর এই গবেবেণা করা হয় । চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় এবং গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞানীরা এই গবেম্বণার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন । তাদের গবেষণা নিবন্ধটি ২১ আগস্ট অস্ট্রেলিয়ার জার্নাল অব ডায়াবেটিস - এ ছাপা হয়েছে । 

গবেষকেরা বলছেন , অসংক্রামক রোগ( উচ্চ রক্তচাপ , ডায়াবেটিস , স্থূলতা , ক্যানসার ইত্যাদি )  প্রতিরােধে যারা কাজ করছেন , এই গবেষণার ফলাফল তাদের সহায়তা করবে । 

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র  বাংলাদেশের ( আইসিডিডিআরবি ) শিশু ও মাতৃস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক শামস - এল - । আরেফিন প্রথম আলােকে বলেন , বাংলাদেশে প্রতিবছর ৬ লাখের বেশি শিশু কম ওজন নিয়ে জনায় । পাশাপাশি দেশে স্থূলতা , ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ বাড়ছে । সুত্তরাং সাংহাইয়ের মানুষের ওপর করা গবেষণাটির প্রাসঙ্গিকতা ও গুরুত্ব রয়েছে বাংলাদেশেও। চীনের সাংহাই এর প্রায় 25 হাজার নারী-পুরুষের ওপর এই গবেষণা করা হয়। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা গবেষণায় যুক্ত ছিলেন।

গবেষণা পদ্ধতি 

 গবেষণায় অংশ নেওয়া নারীদের বয়স ছিল ৪০ খেকে ৭০ বছরের মধ্যে ।পুরুদের বয়স ছিল ৪০ থেকে ৭৪ বছর । এসব নারী - পুরুষের একটি বড় অংশ ১৯৫৯ থেকে ১৯৬১ সাল পর্যন্ত  স্থায়ী চীনা দুর্ভিক্ষের সময় বা তার পরপর  জন্মগ্রহণ করেন । এসব নারী - পুরুষের কাছ থেকে তাঁদের জন্ম - ওজন , শিশু বয়সে বুকের দুধ খাওয়ার অভ্যাস , জীবনচর্চার ধরন , খাদ্যাভ্যাস , কায়িক শ্রমের অভ্যাস , পেশাগত ইতিহাস ও দীর্ঘস্থায়ী রেগের তথ্য সংগ্রহ করেন  গবেষকেরা । 

জন্মের সময় নবজাতকের ওজন ২৫০০ গ্রাম  হওয়া বাঞ্ছনীয় । এর চেয়ে কম ওজন হলে  তাকে লাে বার্থ ওয়েট বা কম জন্ম - ওজন বলা হয় । জন্ম - ওজনের ভিত্তিতে অংশগ্রহণকারীদের চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা হয় । ২৫০০ গ্রামের কম , ২৫০০ - ৩৪ ৯৯ গ্রাম , ৩৫০০ - ৩৯৯৯ গ্রাম এবং ৪০০০ গ্রামের বেশি । প্রতি শ্রেণির সঙ্গে পরিণত বয়সে স্থূলতা , ডায়াবেটিস ও উচচ রক্তচাপের পরিস্থিতি তুলনা করেছেন গবেষকেরা । অংশগ্রহণকারী ৫ দশমিক ৩ শতাংশ পুরুষের এবং ৬ দশমিক ৯ শতাংশ নারীর জল , - ওজন ছিল ২৫০০ গ্রামের কম । 

গবেষকেরা দেখেছেন , কম ওজন নিয়ে যেসব নারী - পুরু জনেছিলেন , প্রাপ্ত হয়সে তাদের  মধ্যে স্থূলতা , ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের প্রকোপ সঠিক ওজন নিয়ে জন্মানাে নারী পুরুষের চেয়ে বেশি । 

তবে জন্মের সময় কম ওজনের সঙ্গে পরিণত বয়সের স্থূলতা , ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের সম্পর্ক সরলরৈখিক না । তারা দেখেছেন , জন্মের পর ' বুকের দুধ খাওয়া , শিক্ষা অর্জন , মাথাপিছু আয় , * ধূমপান , মদ্যপান এবং অবসর কাটানাের সঙ্গে  'স্থূলতা, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকির সম্পর্ক আছে ।

দুষ্ট চক্র

বেষকেরা বলছেন , কম জন্ম - ওজনের সঙ্গে অপুষ্টির সম্পর্ক রয়েছে । এটা স্বতঃসিদ্ধ যে , গর্ভবতী মা অপুষ্টির শিকার হলে , গর্ভাবস্থায় মায়ের ওজন পর্যাপ্ত পরিমাণে না বাড়লে , তার প্রভাব পড়ে গর্ভে থাকা শিশুর ওপর । 

গর্ভে অপর্যাপ্ত পুষ্টির পরিবেশে বেড়ে ওঠা ভ্রূণ এমনভাবে অভিযােজিত হয় যে ,ভ্রূণ শুধু তার  মস্তিষ্কের বৃদ্ধিকে নিশ্চিত করে । তার বিনিময়ে অন্যান্য অঙ্গপ্রত্যঙ্গ যেমন অগ্ন্যাশয় , হৃদপিণ্ড , কিডনি ও শিরদাঁড়াসংলগ্ন মাংসপেশির ব্যাপারে সমঝোতা করে । এই অভিযােজন পরবর্তী  সময়ে বিপাসংক্রান্ত রােগ সৃষ্টিতে ভুমিকা রা

এ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র , ভারতসহ স্ক্যান্ডিনেভিয়ার  দেশগুলাে নিয়ে গবেষণার তথ্য চীনের এই গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছে ।এসব গবেষণায় বলা হয়েছিল , জ্বণ যদি অপুষ্টি বা দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতিতে পড়ে , তবে দীর্ঘ মেয়াদে তা স্বাস্থ্যের ওপর খারাপ পরিণতি ডেকে আনে । 

পরিস্থিতি ও করণীয় 

 বাংলাদেশে বছরে ৩০ থেকে ৩৩ শাখ শিশুর জন্ম হয় । এর মধ্যে ২২ দশমিক ৬ শতাংশ শিশু কম ওজন নিয়ে জন্মায় । এদের মােট সংখ্যা ৬ লাখ ১০ হাজার থেকে ৭ লাখ ৬৫ হাজারের মধ্যে ।গর্ভধারণের পর মায়ের  ওজন কমপক্ষে ১০ কিলােগ্রাম বৃদ্ধি পাওয়া উচিত । বাংলাদেশে গড় বৃদ্ধির পরিমাণ ৫ কেজি


শামস - এল - আরেফিন বলেন , কিশোর বয়সে পুষ্টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে হবে প্রতিটি গর্ভবতী নারীর কাক্ষিত  ওজন বৃদ্ধির ব্যাপারে নজরদারি বাড়াতে হবে । পাশাপাশি জন্ম নেওয়া প্রতিটি শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে । তিনি বলেন , বাংলাদেশে অসংক্রামক রােগ প্রতিরােধে যাঁরা কাজ করছেন । তারা এই গবেষণা ফলাফল তাঁদের প্রচারণার কাজে ব্যবহার করলে মানুষ উপকৃত হবে ।

আরও পড়ুন

শিশুদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলে ফেসবুক