‘পরিবর্তিত বিশ্বে প্রবীণ ব্যক্তির সহনশীলতা’ প্রতিপাদ্যে পালিত হলো ৩২তম বিশ্ব প্রবীণ দিবস। রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সমাজসেবা অধিদপ্তর মিলনায়তনে প্রবীণ-প্রবীণাদের নিয়ে আনন্দঘন পরিবেশে উদযাপন করা হয় দিনটি।

অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি উপস্থিত ছিলেন সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ও সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু। এছাড়াও সমাজকল্যাণ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত ও বিশিষ্ট নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ উপস্থিত ছিলেন।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বলেন, আজকের নবীনেরা আগামী দিনের প্রবীণ। আজকে যারা অবদান রাখছেন তাদের কর্মই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেশ আজকের অবস্থানে এসেছে বর্তমানের প্রবীণদের অবদানেই। তারাই একদিন নবীন ছিলেন। প্রবীণেরা সমাজ-রাষ্ট্র গঠনে ভূমিকা রেখে নিরলস কাজ করেছেন এজন্য আপনাদের আমরা, নবীনেরা সব সময় শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করবো।

সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী মো. আশরাফ আলী খান খসরু ভার্চুয়ালি বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রবীণের সংখ্যা দ্বিগুণ হয়ে যাবে। এজন্য আমাদের শিশু নিবাস বা শিশু কল্যাণে দশজন করে প্রবীণ ব্যক্তিকে রাখা হবে। এতে তারা আনন্দের সঙ্গে সময় অতিবাহিত করতে পারবেন। প্রতিটি জেলায় প্রবীণ নিবাসের কার্যক্রম পরিচালিত হবে। পর্যায়ক্রমে দেশের সব জেলা-উপজেলাগুলোতে ভাতার ব্যবস্থা করা হবে। প্রবীণদের জন্য হাসপাতালগুলোতে বিশেষ সুযোগের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ভিসি ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত।

ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত প্রবন্ধ উপস্থাপনে বলেন, প্রবীণদের নানা সামাজিক, অর্থনৈতিক, পারিবারিক কার্যক্রমে অংশগ্রহণের সুযোগ দিতে হবে। এতে প্রবীণরা সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারবেন। দেশে ৬৫ বছরের বেশি মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আগামী দুই থেকে আড়াই দশকের মধ্যে বাংলাদেশ প্রবীণ প্রধান দেশ হিসেবে গণ্য হবে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ এর ইউনিসেফ।

২০৪৭ সালে বাংলাদেশ প্রবীণ প্রধান দেশে পরিণত হবে। ১৭ বছরের মধ্যে সিঙ্গাপুর প্রবীণ প্রধান দেশ হবে। আর ফ্রান্সে ১১৫ বছরের মধ্যে প্রবীণের সংখ্যা বাড়বে। আমরা জীবনের সঙ্গে অতিরিক্ত সময় যোগ করতে পেরেছি কিন্তু আনন্দ যোগ করতে পারিনি।

প্রবীণদের ওষুধ যেন ২৫ শতাংশ ব্যয়ে কিনতে পারে সে ব্যবস্থা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে তারা আরও সুস্থ সুন্দর এবং কর্মক্ষম জীবন লাভ করবে। এছাড়া কমিউনিটি ক্লিনিকে ৩০টা ওষুধ বিনামূল্যে দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

কোনো প্রবীণ যেন নির্যাতনের শিকার না হয় সেদিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। দেশে ৮ শতাংশ প্রবীণ। এটি সামনে আরো বাড়বে। জীবন উপভোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ছোটবেলা উপভোগ করতে চাইলে সোভিয়েত ইউনিয়নে যাও, যৌবন কাটাতে চাইলে ফ্রান্সে যাও আর বার্ধক্য কাটাতে চাও যদি তাহলে ভারত বর্ষে রয়ে যাও, বলেন তিনি।

সমাজকল্যাণ সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, পুঁজিবাদী বিশ্বের অগ্রসরমানকালে প্রবীণদের হারিয়ে ফেলছি। প্রায় প্রতিটি দেশ অবসরে যাওয়ার বয়স বাড়ানোর চেষ্টা করছে। কারণ প্রবীণদের জন্য আজ অসহনশীলতার পরিবেশ বিরাজ করছে। যৌথ পরিবার ভেঙে নিউক্লিয়ার পরিবার গঠিত হচ্ছে। এজন্য বৃদ্ধাশ্রম না করে প্রবীণদের সঙ্গে নবীনদের যুক্ত করার ব্যবস্থা করতে হবে।

অনুষ্ঠানে নাট্যব্যক্তিত্ব মামুনুর রশীদ বলেন, আমরা সহনশীল হওয়ার কারণে সন্তানরা আমাদের সঙ্গে থাকে না। তাদের চাওয়া পূরণ করতে গিয়ে বিদেশে চলে যায়, আমরা হয়ে যাই একা। আমাদের সন্তান যেন দুধে ভাতে থাকে এটা চাই। আমরা সব সময় পশ্চিমা মডেল অনুসরণ করি। বহু বছর পর আমার এই ভুলটা ভেঙেছে।

একসময় মনে করতাম বৃদ্ধাশ্রম দেশের জন্য ভালো কাজ। কিন্তু এখন মনে হয় আমাদের এখানে দাদা-দাদি, নানা-নানি সহকারে সন্তানরা খুবই স্নেহের সঙ্গে থাকে। দেশের প্রবীণরা বৃদ্ধাশ্রমের সংস্কৃতির সঙ্গে অভ্যস্ত নয়। এজন্য প্রবীণ ও নবীনদের মিলন ঘটাতে হবে। সমাজের মধ্যে থেকেই প্রবীণদের লালন করতে হবে।

শিক্ষাব্যবস্থায় বড় সংকট রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তরুণরা এখন শিক্ষকদের আঘাত করে। মেরে ফেলে। যেখানে শিক্ষকদের শুধু পায়ে স্পর্শ করা যায়। প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকরা ১৫ লাখ টাকা ঘুষ দিয়ে চাকরিতে ঢোকে। তাদের কাছ থেকে ছাত্ররা আর কি নৈতিকতা শিখবে?

বয়স্ক ভাতা দেওয়ার বিষয়ে মামুনুর রশিদ বলেন, জনপ্রতিনিধি মেম্বার-চেয়ারম্যান যারা তালিকা তৈরি করেন তারা এটাকে দুর্নীতির জায়গায় নিয়ে গেছেন। এই দুর্নীতির জায়গা থেকে আমরা মুক্তি চাই।

অনুষ্ঠানে সমাজসেবা অধিদপ্তরের পরিচালক বলেন, দেশে যে ৫৪ লাখ বয়স্ক ভাতা দেওয়া হচ্ছে সেটি অনেক উন্নত দেশের জনসখ্যার চেয়েও বেশি। ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করা হচ্ছে। বিশ্বে বয়স্ক ভাতা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়। ৩৬ শতাংশ প্রদান করে প্রথম স্থানে আছে শ্রীলংকা। আর বাংলাদেশের ২৮. ৪ শতাংশ। এটি আইএলও এর প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়েছে বলে জানান পরিচালক।

অনুষ্ঠানে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়, সমাজসেবা অধিদপ্তর কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংগঠন ও প্রবীণ ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

দিনটি উপলক্ষে সমাজসেবা অধিদপ্তর নানামুখী উদ্যোগ গ্রহণ করে। এর মধ্যে র‍্যালি, আলোচনা সভা, বিশেষ ক্রোড়পত্র ও প্রচারপত্র প্রকাশ করা হয়।

সূত্র-(ঢাকাটাইমস/১অক্টোবর/