Print
Hits: 1843

জাতীয় বাজেট বাংলাদেশ সরকার প্রণীত একটি বার্ষিক দলিল যাতে রাষ্ট্রের সাংবাৎসরিক আয়-ব্যয়ের পরিকল্পনা প্রকাশ করা হয়। বাজেট হচ্ছে একটি দেশের সম্ভাব্য আয়-ব্যয়ের হিসাব। সরকারকে দেশ চালাতে হয়, সরকারের হয়ে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের বেতন দিতে হয়, আবার নাগরিকদের উন্নয়নের জন্য রাস্তাঘাট বানানোসহ নানা ধরনের উদ্যোগ নিতে হয়। সুতরাং একটি নির্দিষ্ট অর্থবছরে কোথায় কত ব্যয় হবে, কোথা থেকে কেমন আয় হবে ইত্যাদি পরিকল্পনার নামই বাজেট । অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র হ্রাস এবং সামাজিক উন্নয়নের জন্য গৃহীত সুনিদিষ্ট জাতীয় কৌশলের পটভূমিতে জাতীয় বাজেট প্রণীত হয়। জাতীয় বাজেট মূলত দুটি অংশে বিভক্ত । প্রথম অংশে থাকে রাজস্ব আদায় সংক্রান্ত বিষয়াদি। এই অংশে সরকারের রাজস্ব ব্যবস্থা ও আদায় সংক্রান্ত প্রস্তবসমূহ বিবৃত থাকে।  দ্বিতীয় অংশে থাকে সরকারী ব্যয়ের প্রস্তাব সমূহ।

প্রতি বৎসর একটি আইনপ্রস্তাব বা "বিল" আকারে জাতীয় বাজেট জাতীয় সংসদে উত্থাপন করা হয়। একে বলা হয় অর্থ বিল। সংসদ সদস্যরা অনুমোদনের পর এটি আইনে পরিণত হয়। বাংলাদেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড রাজস্ব প্রস্তাবসমূহ প্রণয়ন করে এবং অর্থ বিভাগ ব্যয় প্রস্তাবসমূহ প্রণয়ন করে। বাংলাদেশে প্রতি বৎসর জুন মাসে জাতীয় বাজেট প্রণয়ন করা হয় এবং অনুমোদনের পর তা পরবর্তী অর্থবৎসরের জন্য কার্যকর হয়। ১২ মাসের জন্য বাজেট প্রণয়ন করা হয় যা চলতি বছরের ১লা জুলাই থেকে পরবর্তী বৎসরের ৩০শে জুন পর্যন্ত কার্যকর থাকে। দেশের অর্থ মন্ত্রী জাতীয় সংসদের অর্থ বিল পেশ করেন। প্রতি বছর জুন মাসে বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের বাজেট অধিবেশনে সরকারের পক্ষে অর্থমন্ত্রী বাজেট বিল পেশ করেন। এর আগে এই বাজেট বিল ক্যাবিনেট সভায় বিবেচনা ও অনুমোদন করা হয়।

২০৪১ সালের মধ্যে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশের স্তর পেরিয়ে একটি শান্তিপূর্ণ, সুখী উন্নত- সমৃদ্ধ সোনর বাংলা গড়ার লক্ষ্যকে সামনে রেখে ২০১৯-২০ অর্থবছরের জন্য ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব পেশ করা হয়। বাজেট উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।

পুঁজিবাজারে প্রণোদনায় সংশোধন, আমদানি পণ্যের শুল্কহার সংশোধন, একাধিক মূসক হার প্রচলন, শেয়ারবাজারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত লভ্যাংশ সীমাবৃদ্ধিসহ বেশ কিছু পরিবর্তন ও সংশোধনী এনে জাতীয় সংসদে অর্থ বিল ২০১৯ পাস হয়। শনিবার (২৯ জুন) অর্থমন্ত্রীর পক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অর্থ বিল জাতীয় সংসদে উত্থাপন করলে তা কণ্ঠভোটে পাস হয়। রবিবার জাতীয় সংসদে ‘২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্য অর্থবছরের কার্যাদি নির্বাহের জন্য সংযুক্ত তহবিল হতে র্অথ প্রদান ও নির্দিষ্টকরণ বিল’ পাসের মাধ্যমে এই বাজেট গৃহীত হয়।

জাতীয় বাজেট ২০১৯ এর খুটিনাটিঃ

অর্থবিলের মাধ্যমে বাজেটের আইনি প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। তবে প্রস্তাবিত বাজেটে যা ছিল, চূড়ান্তভাবেও মোটামুটি তা-ই রাখা হয়েছে। এক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসেনি। করমুক্ত আয়সীমা বাড়ানো হয়নি। অপরিবর্তিত রয়েছে কর্পোরেট কর। এতে বিনিয়োগে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ভ্যাটের কারণে বেশকিছু পণ্যের দাম বাড়বে। কয়েকটি পণ্যের আমদানি শুল্ক ও সম্পূরক শুল্কের প্রভাবে আমদানি ব্যয় বাড়বে। ফলে মধ্যবিত্তের ওপর চাপ বৃদ্ধির আশঙ্কা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়ে যাবে। বাংলাদেশ সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাবে এই প্রত্যাশা করছি।

মোঃ কামরুজ্জামান কিরন

(তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়াসহ অনলাইন সংবাদপত্র ও অন্যান্য মাধ্যম হতে সংকলিত)