বাক্যের বিভিন্ন ভাব সার্থকভাবে প্রকাশের জন্যে কণ্ঠস্বরের ভঙ্গির তারতম্য বোঝাতে বর্ণের অতিরিক্ত যে-সব চিহ্ন ব্যবহৃত হয় সেগুলোকে বলে বিরাম (Punctuation) চিহ্ন, যতিচিহ্ন বা ছেদচিহ্ন বলে। বাংলা ভাষায় ২০টির মতো যতিচিহ্ন রয়েছে। এদের মধ্যে বাক্যশেষে ব্যবহার্য যতিচিহ্ন ৪টি; বাক্যের ভিতরে ব্যবহার্য ১০টি এবং বাক্যের আগে পরে ব্যবহার্য ৬টি।

আমরা যখন কথা বলি তখন সবগুলো বাক্য একযোগে না বলে থেমে থেমে বলি। অনেক সময় আবেগ প্রকাশ করি। কিন্তু বাক্য লিখে প্রকাশ করার সময় বিরতি ও আবেগ নির্দেশ করতে যতিচিহ্নের প্রয়োজন হয়। বাক্যে যতিচিহ্নের অশুদ্ধ ব্যবহার ক্ষেত্রবিশেষে অর্থবিকৃতি ঘটাতে পারে।

যতি বা বিরাম চিহ্নের প্রবর্তক ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি তাঁর বেতাল পঞ্চবিংশতি (১৮৪৭) গ্রন্থে প্রথম যতি চিন্থের ব্যবহার করেন।

যতি বা ছেদ চিহ্নের ব্যবহার

কমা বা পাদচ্ছেদ (,)

বাক্য পাঠকালে সুস্পষ্টতা বা অর্থ-বিভাগ দেখানোর জন্য যেখানে সল্প বিরতির প্রয়োজন, সেখানে কমা ব্যবহৃত হয়।

  • পরস্পর সম্পর্কযুক্ত একাধিক বিশেষ্য বা বিশেষণ পদ একসঙ্গে বসলে শেষ পদটি ছাড়া সবগুলোর পরই কমা বসবে।
  • সম্বোধনের পর কমা বসবে।
  • জটিল বাক্যের অন্তর্গত প্রত্যেক খন্ডবাক্যের পর কমা বসে।
  • উদ্ধরণ চিহ্নের পূর্বে কমা বসবে।
  • মাসের তারিখ লিখতে বার ও মাসের পর কমা বসবে।
  • বাড়ি বা রাস্তার নম্বরের পর কমা বসে।
  • নামের পরে ডিগ্রিসূচক পরিচয় সংযোজিত হলে সেগুলোর প্রত্যেকটির পরে কমা বসে।

বিরতি কাল: ১ (এক) বলতে যে সময় প্রয়োজন।

সেমিকোলন বা অর্ধচ্ছেদ (;)

কমা অপেক্ষা বেশি বিরতির প্রয়োজন হলে, সেমিকোলন বসে।

বিরতি কাল: ১ বলার দ্বিগুণ সময়।

দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ (।)

বাক্যের পরিসমাপ্তি বোঝাতে দাঁড়ি বা পূর্ণচ্ছেদ ব্যবহার করতে হয়।

বিরতি কাল: এক সেকেন্ড সময়।

প্রশ্নবোধক চিহ্ন (?)

বাক্যে কোনোকিছু জিজ্ঞাসা করা হলে বাক্যের শেষে প্রশ্নবোধক চিহ্ন বসে।

বিরতি কাল: এক সেকেন্ড সময়।

বিস্ময় ও সম্বোধন চিহ্ন (!)

হৃদয়াবেগ প্রকাশ করতে এ চিহ্নটি বসে।

সম্বোধন পদের পর বিস্ময়সূচক চিহ্ন ব্যবহৃত হতো; কিন্তু আধুনিক নিয়মে সম্বোধন স্থলে কমা বসে।

বিরতি কাল: এক সেকেন্ড সময়।

কোলন (:)

একটি অপূর্ণ বাক্যের পর অন্য একটি বাক্যের অবতারণা করতে কোলন ব্যবহৃত হয়। বর্তমানে উদাহারণ বোঝাতেও কোলন বহুল ব্যবহৃত।

বিরতি কাল: এক সেকেন্ড সময়।

ড্যাস (—)

যৌগিক ও মিশ্র বাক্যে পৃথক ভাবাপন্ন দুই বা তার বেশি বাক্যের সমন্বয় বা সংযোগ বোঝাতে ড্যাস বসে।

বিরতি কাল: এক সেকেন্ড সময়।

কোলন ড্যাস (:-)

উদাহারণ বোঝাতে আগে কোলন ড্যাস ব্যবহৃত হত। বর্তমানে উদাহারণ বোঝাতে শুধু কোলন বহুল ব্যবহৃত।

বিরতি কাল: এক সেকেন্ড সময়।

হাইফেন বা সংযোগ চিহ্ন (-)

সমাসবদ্ধ পদগুলোকে আলাদা করে দেখানোর জন্য এটি ব্যবহৃত হয়।

বিরতি কাল: থামার প্রয়োজন নেই।

ইলেক বা লোপচিহ্ন (')

কোনো বিলুপ্ত বর্ণের পরিবর্তে লোপ চিহ্ন বসে।

বিরতি কাল: থামার প্রয়োজন নেই।

একক উদ্ধরণ বা উদ্ধৃতি চিহ্ন (' ')

বক্তার প্রত্যক্ষ উক্তিকে এই চিহ্নের অর্ন্তভুক্ত করতে হয়।

বিরতি কাল: 'এক' উচ্চরণে যে সময় লাগে।

যুগল উদ্ধরণ বা উদ্ধৃতি চিহ্ন (" ")

যদি উদ্ধৃতির ভেতরে আরেকটি উদ্ধৃতি থাকে তখন প্রথমটির ক্ষেত্রে দুই উদ্ধৃতি চিহ্ন এবং ভেতরের উদ্ধৃতির জন্য এক উদ্ধৃতি চিহ্ন হবে। এছাড়াও প্রবন্ধ, গল্প ও কবিতার নামের ক্ষেত্রেও যুগল উদ্ধৃতি চিহ্ন ব্যবহার করা হয়।

বিরতি কাল: 'এক' উচ্চরণে যে সময় লাগে।

বন্ধনী চিহ্ন

বন্ধনি চিহ্ন তিন প্রকার। যেমন:

প্রথম বা বক্র বন্ধনী ( )

দ্বিতীয় বা গুম্ফ বন্ধনী { }

তৃতীয় বা সরল বন্ধনী [ ]

মূলত গণিত শাস্ত্রে এগুলো ব্যবহৃত হলেও বিশেষ ব্যাখ্যামূলক অর্থে সাহিত্যে প্রথম বন্ধনী ব্যবহৃত হয়।

বিরতি কাল: থামার প্রয়োজন নেই।

ধাতু দ্যোতক চিহ্ন √

পরবর্তী রূপবোধক চিহ্ন <

পূর্ববর্তী রূপবোধক চিহ্ন >

সমান চিহ্ন =

বর্জন চিহ্ন ...

সংক্ষেপণ চিহ্ন .

সূত্রঃ উইকিপিডিয়া ও অন্যান্য অনলাইন মাধ্যম