Print
Hits: 2927

ণত্ববিধানঃ ণ/ন-এর বানান

বাংলা তৎসম শব্দের ‘ণ’ বর্ণের সঠিক ব্যবহার বিধিকে ণত্ববিধান বলে। অথবা বাংলা শব্দে ‘ণ’ ও ‘ন’ বর্ণের সঠিক ব্যবহার বিধিকে ণত্ববিধান বলে। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের মতে, ‘শুধু সংস্কৃত শব্দে যেখানে ণ আছে, বাংলা ভাষায় ব্যবহারের সময় সেখানে তাই রাখতে হবে। এটাই ণত্ববিধান।’ কথা তৈরি করতে বর্ণ, শব্দ ও বাক্য লাগে কিন্তু অনেক সময় শব্দ ও বাক্যকে উপেক্ষা করে বর্ণ কথা বলে। যেমন:

নতুন অর্থে : কিরে ন বউকে নিয়ে কেমন আছিস?
সংখ্যা অর্থে : ন জন মানুষ এক পরিবারে।
নিষেধ/অভাব/নাসূচক : সে ন মানুষ ন জানোয়ার।

ণ বর্ণের বানান
১. সংস্কৃত শব্দে স্বভাবতই ‘ণ’ ব্যবহৃত হয়। যেমন : গ্রহণ, স্বর্ণ, পণ্য, বীণা।

২. ঋ, ঋ-কারের পর ‘ণ’ বসে। যেমন : ঋণ, তৃণ।

৩. র, র-ফলা, রেফ-এর পর ‘ণ’ বসে। যেমন : চরণ, প্রাণ, কর্ণ।

৪. সাধারণত ষ-এর পর ‘ণ’ বসে। যেমন : ভাষণ।

৫. ট-বর্গীয় (ট, ঠ, ড) যুক্ত শব্দে ‘ণ’ বসে। যেমন : কণ্টক, কণ্ঠ, দণ্ড।

৬. নার, পার, পর-এর পর অয়ন যুক্ত শব্দে ‘ণ’ বসে। যেমন : নারায়ণ, রামায়ণ, পরায়ণ।

৭. প্র, পরি, নির উপসর্গ গঠিত শব্দে ‘ণ’ বসে। যেমন : প্রণাম, পরিত্রাণ, নির্ণয়, পরিণতি।

৮. অপর, প্র, পর, পূর্ব এ ওপর হ-এর সঙ্গে ‘ণ’ যুক্ত হয়। যেমন : অপরাহ্ণ, পরাহ্ণ, পূর্বাহ্ণ।

ন বর্ণের বানান
নাবাচক ক্রিয়া বিশেষণ ও উপসর্গ: নাই, নয়, না, নে, নি ন>নঞ> নাইং> নাই>নাই>না>নি>নে। ক্রিয়াবিশেষণ বা না বাচক শব্দ -নাই, নাই, নহে, নয়, না, আলাদা বসে। আর নে, নি ক্রিয়ার সঙ্গে বসে। দেখি নাই, দেখি না, দেখিনে, দেখিনি। এরা সাধারণ বর্তমান বা সাধারণ হিসাবেও বসে। নি দিয়ে অতীতকাল বোঝায়। নি বা না নাবাচক উপসর্গ হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। যেমন: নিকৃষ্ট, নির্দয়, নিবাস, নিখাত, নিখুঁত, নিখোঁজ, নিমগ্ন, নিপুণ, নিবিড়, নিস্তব্ধ, নিপাতন, নির্বোধ, নির্লজ্জ, নিপাত, নারাজ, নাচার, নাখোশ, নালায়েক, নাপাক, নাবালক ইত্যাদি।

ন-এর সঠিক ব্যবহার -
১. তদ্ভব শব্দে ‘ন’ ব্যবহৃত হয়। যেমন: সোনা, কান, পান, নুন, ঘেন্না।

২. ত-বর্গীয় (ত, থ দ, ধ, ন) শব্দে ‘ন’ বসে। যেমন: অন্ত , অন্ন, অন্ধ, ছন্দ, পন্থা।

৩. ট-বর্গীয় (ট, ঠ, ড) বাদে অন্যান্য যুক্তবর্ণে ‘ন’ বসে। যেমন: অগ্নি, জন্ম, রতœ, স্নেহ, প্রশ্ন।

৪. ক্রিয়াপদে সব সময় ‘ন’ বসে। যেমন: খান, করেন, মরেন, পাঠান।

৫. বিদেশি শব্দে ‘ন’ বসে। যেমন: গ্রিন, ইস্টার্ন, কেরানি, হর্ন, কুরআন।

৬. সাধিত শব্দে ‘ন’ বসে। যেমন: সর্বনাম, নির্গমন, নিস্পন্ন, অহর্নিশ।

৭. শব্দের শুরুতে ‘ন’ বসে (ণত্ব, ণিজন্ত বাদে)। যেমন: নয়ন, নায়ক, নাক।

৮. ‘ণ’ বর্ণের পর ‘ন’ বসে। যেমন: গণনা, বর্ণনা, পাণিনি।

৯. সময়ে ‘ন’ বসে। যেমন : মধ্যাহ্ন, সায়াহ্ন।

ষত্ববিধানঃ ষ/স/শ-এর বানান

শ/স/ষ-এর সঠিক ব্যবহারকে ষত্ববিধান বলে। যেমন:

১. ঋ/ঋ-কারের পর সংস্কৃত শব্দে ‘ষ’ বসে। যেমন: ঋষভ, ঋষি, কৃষি, কৃষক, বৃষ্টি, তৃষ্ণা।

২. রেফ-এর পর ‘ষ’ বসে। যেমন: কর্ষ, বর্ষ, হর্ষ, বার্ষিক। নিষ্পাপ, নিষ্ফল, নিষ্পন্ন, নিষ্কৃতি।

৩. ট-বর্গীয় (ট, ঠ, ড) সংস্কৃত শব্দে ‘ষ’ বসে। যেমন: অষ্ট, কষ্ট, ষষ্ঠ, রুষ্ট, সৃষ্টি।

৪. অধি/অনু/অভি/ পরি/প্রতি/বি/সু যুক্ত উপসর্গে ‘ষ’ বসে। যেমন: অনুষঙ্গ, পরিষদ, পরিষ্কার, প্রতিষেধক, প্রতিষ্ঠান, বিষণ্ন, সুষম।

৫. ‘নিঃ’ ও ‘দুঃ’ উপসর্গে গঠিত শব্দে ‘ষ’ বসে অর্থাৎ নিষ ও দুষ যুক্ত শব্দে ‘ষ’ বসে। যেমন: নিষেধ, নিষ্পন্ন, দুষ্প্রাপ্য, দুষ্কর, দুষ্কৃতি।

৬. বিশেষ্য হলে ‘শ’ আর বিশেষণ হলে ‘ষ’ বসে। যেমন: আদেশ-আদিষ্ট, আবেশ-আবিষ্ট, ক্লেশ-ক্লিষ্ট, নির্দেশ-নির্দিষ্ট, প্রবেশ-প্রবিষ্ট, বিনাশ -বিনষ্ট।

৭. সন্ধি বা বিসর্গ সন্ধিতে ‘স’ বসে। সাৎ প্রত্যয়যুক্ত শব্দে স বসে। যেমন: তিরস্কার, পুরস্কার, ভাস্কর, বৃহস্পতি, আকসাৎ।

৮. বিদেশি শব্দে ‘শ’ বা ‘স’ বসে। চ-বর্গীয় শব্দে ‘শ’ বসে। ট-বর্গীয় (ট, ঠ, ড) বিদেশি শব্দে স বসে। যেমন: তামাশা, খুশি, মসজিদ, সালাম, আশ্চর্য, নিশ্চয়, পশ্চিম, আগস্ট, মাস্টার, স্টোর, পোস্টার, স্কুল।

৯. বিদেশি শব্দে ‘স/শ’ বসে (‘ছ/ষ’ বসে না) ঝ, s>স, স্ট /sh>শ। যেমন: আর্টিস্ট, টুরিস্ট, টেস্ট, টোস্ট, টেস্টি, ডাস্টবিন, মাস্টার, পোস্টার, ফাস্ট, ব্রেকফাস্ট, রেজিস্ট্রার, স্কুল, স্টল, স্টপ, স্টেশন, স্টুডিও পেস্ট, স্টোর, স্ট্রিট, স্টেডিয়াম, স্টিকার, সিলেবাস, হোস্টেল, স্টেশন, সেশন, শিপ, ব্রিটিশ, মেশিন, কমিশন।